ফুটবলের রাজা কে? কেন তাকে রাজা বলা হয়?
ফুটবলের রাজা বলতে সাধারণত ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে (Pelé)-কে বোঝানো হয়। তাঁর পুরো নাম এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো (Edson Arantes do Nascimento)। তিনি ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তিনি ফুটবলে অসাধারণ অবদানের জন্য তাকে রাজা বলা হয়। পেলেকে "ফুটবলের রাজা" বলা হয় তার অসাধারণ প্রতিভা, অর্জন এবং বিশ্ব ফুটবলে তার অমর প্রভাবের জন্য। ফুটবলে অনেক কিংবদন্তি খেলোয়াড় থাকলেও পেলের সাফল্য এবং অবদানের গভীরতা তাকে এই উপাধি এনে দিয়েছে।
১৯৭৭ সালে অবসর নেওয়ার পরেও সাবেক এই খেলোয়াড় এখনো সবচেয়ে পরিচিত এবং সম্মানিত ব্যক্তি। মানুষের কল্পনার সীমাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল ফুটবল খেলায় পেলে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন এজন্য তার গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল খেলাধুলার বাইরের জগতেও। ফুটবলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় বা রাজা হিসেবে অনেকের কাছে প্রশংসিত পেলে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৮ বিশ্বকাপ চলাকালে তাঁকে হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় দেখা যায়। সেই টুর্নামেন্টের এক মাস পরেই পেলেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের পর থেকে তিনি ডাক্তারদের কাছ থেকে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালের শেষের দিকে তাঁকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কাতার বিশ্বকাপজুড়ে এরপরে ক্রিসমাসের সময়েও পেলে সাও পাওলোর হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পেলের মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো পুরো সময়জুড়ে অসুস্থ বাবার স্বাস্থ্যের খবরাখবর বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলেন।
ফুটবল রাজার মতো বর্ণিল এক জীবন কাটিয়েছেন পেলে। পেয়েছেন অনেক স্বীকৃতি। ১৯৯৯ সালে শতাব্দীর সেরা অ্যাথলেট হিসেবে স্বীকৃতি পান আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কাছ থেকে। ফিফার ‘প্লেয়ার অব দ্য সেঞ্চুরি’ হয়েছেন ম্যারাডোনার সঙ্গে যৌথভাবে।
পেলের সংক্ষিপ্ত জীবনী:
- জন্ম: ২৩ অক্টোবর ১৯৪০, ট্রেস কোরাকোয়েস, ব্রাজিল
- মৃত্যু: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২
- উচ্চতা: ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি
- পজিশন: ফরোয়ার্ড, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
- নামকরণ: টমাস আলভা এডিসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার নাম রাখা হয়েছিল এডসন।
পেলের অর্জন ও রাজা হওয়ার কারণ:
- তিনবার বিশ্বকাপ জয়ী:পেলে একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তিনটি ফিফা বিশ্বকাপ জিতেছেন (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০)। এরকম অবদান পুথীবির আর ফুটবলারের নেই।
- বিশ্বকাপ রেকর্ড:১৯৫৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করেন, যা তাকে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা বানিয়েছিল। এত অল্প বয়সে তার প্রতিভা পরিশ্রম সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।
- ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ:এ বিশ্বকাপ ছিল পেলের নেতৃত্বে ব্রাজিলের অন্যতম সেরা বিশ্বকাপ দল। ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে একটি গোলসহ অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখান।
- গোলের রেকর্ড:তার ক্যারিয়ারে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলে ১,৩৬৩টি ম্যাচ খেলে মোট ১,২৮১টি গোল করেছেন যা বিশ্ব রেকর্ড।
ক্লাব ক্যারিয়ার:
- সান্তোস (Santos): তিনি ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ক্লাব সন্তোস এ খেলেছেন।
- নিউইয়র্ক কসমস (New York Cosmos): তারপর ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্ক কসমস এ খেলেছেন।
পেলের খেলার ধরন:
পেলের খেলা ছিল চমৎকার গতিশীলতা, শক্তিশালী শট, নিখুঁত পাসিং, এবং বলের ওপর অতুলনীয় নিয়ন্ত্রণের জন্য বিখ্যাত। তার খেলার স্টাইলকে বলা হয় "দ্য বিউটিফুল গেম" (O Jogo Bonito)।
পেলের প্রতি শ্রদ্ধা:
ফুটবল বিশ্বে পেলের নাম এতটাই প্রভাবশালী যে "দ্য কিং অফ ফুটবল" (The King of Football) বা "ও রেই" (O Rei) নামে তাকে সম্মানিত করা হয়। নিউইয়র্ক কসমসে খেলার মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখেন। পেলে বলেছিলেন, "ফুটবল একটি সুন্দর খেলা। এটি ভাষা, সংস্কৃতি এবং জাতির সীমানা ভেদ করে সবাইকে একত্রিত করতে পারে।"