ইসলামে পরিবার ও সন্তানের প্রতি দায়িত্ব
ইসলামে পরিবারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা হয়, যা সমাজের ভিত্তি গঠন করে। পরিবারে প্রতিটি সদস্যের জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে পিতা-মাতা এবং সন্তানের প্রতি একে অপরের যে কর্তব্য ও দায়িত্ব তা কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব কীভাবে ইসলাম পরিবার এবং সন্তানের প্রতি দায়িত্বকে গুরুত্ব দিয়েছে এবং কীভাবে আমরা তা জীবনে প্রয়োগ করতে পারি।
পরিবারের গুরুত্ব ইসলামে
পরিবার হচ্ছে মানুষের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একজন ব্যক্তি যে নৈতিকতা ও আচরণ শিখবে, তার ভিত্তি পরিবারেই গড়ে ওঠে। ইসলামে পরিবারকে শৃঙ্খলা, ভালোবাসা, এবং সহযোগিতার একটি স্থান হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন:
"আর আমি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা তাদের মাধ্যমে প্রশান্তি পাও এবং আমি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও করুণা সৃষ্টি করেছি।"
(সূরা আর-রূম: ২১)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও করুণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পিতা-মাতার দায়িত্ব
ইসলামে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের অনেক অধিকার রয়েছে। পিতা-মাতার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানকে ইসলামিক শিক্ষা প্রদান করা এবং তাদের নৈতিকভাবে সঠিক পথে পরিচালিত করা। সকল সন্তানের মাঝে সম-অধিকার বজায় রাখা।
১. সন্তানকে হালাল রিজিক প্রদান করা
পিতা-মাতার প্রধান দায়িত্ব হল সন্তানদের হালাল রিজিকের মাধ্যমে প্রতিপালন করা। হালাল উপার্জন শুধু সন্তানের শারীরিক পুষ্টি নয়, বরং তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতিতেও প্রভাব ফেলে।
"হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের সন্তানদের এবং নিজেদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।"
(সূরা আত-তাহরীম: ৬)
২. সঠিক শিক্ষা প্রদান করা
শিক্ষা শুধু একাডেমিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় শিক্ষাও অন্তর্ভুক্ত। সন্তানকে কীভাবে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে হবে এবং আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে তা শেখানো অত্যন্ত জরুরি।
"তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল, এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল।"
(বুখারি ও মুসলিম)
৩. সন্তানকে নামাজের অভ্যাস করানো
পিতা-মাতার দায়িত্ব হল ছোট বেলা থেকেই সন্তানকে নামাজের প্রতি উৎসাহিত করা।
"তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়স থেকেই নামাজের নির্দেশ দাও।"
(আবু দাউদ)
মায়ের দায়িত্ব
মা হচ্ছে পরিবারের আত্মা। সন্তানের চরিত্র গঠন এবং তাদের আধ্যাত্মিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম।
১. ভালোবাসা এবং আদর
মা সন্তানের কাছে ভালোবাসার সবচেয়ে বড় উৎস। তার ভালোবাসা এবং আদর সন্তানের মানসিক উন্নয়নে সহায়ক হয়।
২. ইসলামিক মূল্যবোধ শেখানো
মা শিশুদের প্রথম শিক্ষক। তিনি তাদের কুরআন শিক্ষা, দোয়া শেখানো এবং ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো প্রদান করেন।
৩. ধৈর্যশীল ও নম্র হওয়া
একজন মা হিসেবে সন্তানদের প্রতি ধৈর্যশীল ও নম্র হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানরা ভুল করলে ধৈর্য সহকারে তাদের সংশোধন করা উচিত।
"মা জান্নাতের দরজার চাবি।" (তিরমিজি)
সন্তানের দায়িত্ব পিতা-মাতার প্রতি
ইসলামে সন্তানদের জন্যও পিতা-মাতার প্রতি কিছু দায়িত্ব নির্ধারিত আছে। পিতা-মাতার যত্ন ও সেবা করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।
১. পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা
পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া সন্তানদের জন্য ফরজ।
"তোমার পালনকর্তা আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।"
(সূরা বনী ইসরাইল: ২৩)
২. পিতা-মাতার কথা মেনে চলা
যতক্ষণ না তা আল্লাহর নির্দেশনার বিরুদ্ধে যায়, ততক্ষণ পিতা-মাতার কথা মেনে চলা সন্তানের দায়িত্ব।
৩. তাদের প্রতি দোয়া করা
পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা সন্তানের অন্যতম দায়িত্ব।
"হে আমার পালনকর্তা! তাদের প্রতি রহম কর, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।"
(সূরা বনী ইসরাইল: ২৪)
পরিবারে শান্তি বজায় রাখার উপায়
পরিবারে শান্তি বজায় রাখার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, এবং ধৈর্য প্রয়োজন।
- পরিবারের সদস্যদের প্রতি নম্র ও ভদ্র আচরণ করা
- নিয়মিত পারিবারিক বৈঠক ও আলোচনা করা
- ইসলামী শিক্ষা এবং মূল্যবোধ পরিবারের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা
পরিশেষে
ইসলামে পরিবার একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান যা ভালোবাসা, করুণা এবং দায়িত্বের ওপর ভিত্তি করে গঠিত। পিতা-মাতা এবং সন্তানের প্রতি ইসলামের নির্দেশিত দায়িত্বগুলো পালন করলে পরিবারে শান্তি, সুখ, এবং বরকত নেমে আসে। তাই, আমাদের উচিত পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করা এবং ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।
আরও জানুন:
এই পোস্টটি ইসলামী মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে লিখিত হয়েছে এবং পরিবার ও সন্তানের প্রতি আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের পরিবারগুলোকে শান্তি এবং বরকত দান করুন। আমিন।
অন্য পোষ্ট পড়ুন :