ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তি
ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তি
আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, ইহুদি হোক আর খৃষ্টান হোক, যে ব্যাক্তিই আমার এ আহবান শুনেছে, অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে। -(সহীহ মুসলিম – ২৮৩)
ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি:
১. শাহাদাহ (ঈমান):
শাহাদাহ অর্থ সাক্ষ্য প্রদান করা যে,
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”
অর্থাৎ, "আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, এবং মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।"
আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত জিবরাইল (আ.) একবার ছদ্মবেশে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ঈমান কাকে বলে?’ জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ঈমান হচ্ছে- আপনি বিশ্বাস স্থাপন করবেন আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি, আল্লাহর নবী-রাসুলদের প্রতি, কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং তকদিরের ভালো ও মন্দের প্রতি। এই হলো ঈমান।’ (বুখারি: ৫০)।
গুরুত্ব:
- এটি ইসলামের মূল আকিদা এবং প্রথম ও প্রধান স্তম্ভ।
- এ বিশ্বাসের মাধ্যমে একজন মানুষ ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করে।
- এই বিশ্বাস অনুযায়ী একজন মুসলিমের দৈনন্দিন কার্যকলাপ পরিচালিত হয়।
২. সালাত (নামাজ):
সালাত হলো প্রতিদিন পাঁচবার আল্লাহর প্রতি ইবাদত বা প্রার্থনা করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি? রাসুল (সা.) বললেন, ‘নামাজ’। (বুখারি ও মুসলিম)। আরও বলেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তার থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে নেন।’ (বুখারি : ১৮)।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত:
- ফজর (ভোর)
- জোহর (দুপুর)
- আসর (বিকেল)
- মাগরিব (সন্ধ্যা)
- এশা (রাত)
গুরুত্ব:
- নামাজ হলো মুসলিমদের জন্য দৈনিক পাঁচবার আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম।
- এটি মানুষকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এবং পাপ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
- কিয়ামতের দিন সালাতই হবে প্রথম প্রশ্ন যা মানুষের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করা হবে।
৩. সাওম (রোজা):
রমজান মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার, এবং যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার নাম সাওম।
গুরুত্ব:
- এটি আত্মশুদ্ধি এবং তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের একটি উপায়।
- রোজা মানুষকে ধৈর্যশীল হতে শেখায় এবং দরিদ্র মানুষের কষ্ট অনুভব করতে সাহায্য করে।
- এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অন্যতম মাধ্যম।
৪. যাকাত (দান):
যাকাত হলো নির্ধারিত সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা।কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)
গুরুত্ব:
- এটি ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে।
- জাকাত মুসলিমদেরকে অহংকার, লোভ, এবং স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত রাখে।
- এটি সমাজে আর্থিক বৈষম্য কমায় এবং একে অপরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে।
নিসাব:
যারা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক, তাদের ওপর বছরে একবার জাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক। নিসাবের পরিমাণ সোনা ও রুপার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
৫. হজ (পবিত্র কাবা গমন):
গুরুত্ব:
- হজ মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, এবং আত্মশুদ্ধির প্রতীক।
- হজ আদায় করে একজন মুসলিম জীবনের সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে।
- এটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমদের একত্রিত করে আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়।
ইসলামের এই পাঁচটি স্তম্ভ মুসলিমদের বিশ্বাস, আচার-আচরণ এবং দৈনন্দিন জীবনের কেন্দ্রে অবস্থান করে। এগুলো অনুসরণের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
"ইসলামের পাঁচ স্তম্ভই একজন মুসলিমের জীবনকে আলোকিত করে।"
অন্য পোষ্ট পড়ুন :