ডি-মারিয়ার ক্লাব বেনফিকার বিলো গুতমান এর শত বছরের অভিশাপ: সত্য নাকি মিথ?
ইউরোপিয়ান ফুটবলে এক ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের নাম এসএল বেনফিকা। পর্তুগিজ এই ক্লাবটি তাদের অসাধারণ পারফরম্যান্স ও সাফল্যের জন্য পরিচিত। তবে ক্লাবটি একটি কুখ্যাত কাহিনির জন্যও সমানভাবে আলোচিত—যাকে বলা হয় বেনফিকার ১০০ বছরের অভিশাপ।
অভিশাপের সূচনা ও গুতমান সম্পর্কে
১৯৬২ সালে বেনফিকা ইউরোপিয়ান কাপে (বর্তমানের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জেতে। সেই সময় তাদের কোচ ছিলেন কিংবদন্তি বেলা গুতমান। পরপর দুটি ইউরোপীয় শিরোপা জেতানোর পর গুতমান ক্লাবের ম্যানেজমেন্টের কাছে বেতন বৃদ্ধি ও বোনাস দাবি করেন। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষ তার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে।
ক্ষুব্ধ গুতমান ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার আগে একটি অভিশাপ দিয়ে যান। তিনি বলেন,
"আগামী ১০০ বছর বেনফিকা আর কোনো ইউরোপীয় শিরোপা জিততে পারবে না।"
বিলো গুতমান ছিলেন একজন যাযাবর বা অভিযাত্রী বললে খুব একটা ভুল হবে না, যিনি তার ফুটবল জ্ঞান দিয়ে নাচিয়েছেন তিন মহাদেশের মানুষকে, নিজে হয়েছেন ইতিহাস সৃষ্টিকারীদের একজন।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার কথা। হাঙ্গেরীর রাজধানী বুদাপেস্টের এক ইহুদী পরিবারে জন্ম নিলেন গুতমান। বাবা আব্রাহাম আর মা অ্যাস্টারের নাচের দুনিয়ার ছাপ পড়েছিল তার উপরেও, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই হয়ে যান নাচের শিক্ষক।তিনি এমন একটা সময়েই তার ছেলেবেলা পার করছিলেন, যখন হাঙ্গেরী ইউরোপের ফুটবল পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছিল। রাশিয়াকে দুই ম্যাচে ২১ গোলে হারানোর স্মৃতিটুকু দাগ কেটেছিল বিলোর মনে। তাই জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে দেরি করেননি তিনি, কিছুদিনের মধ্যেই যোগ দেন স্থানীয় ক্লাব ‘তোরেকভাস’-এ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শোরগোল থেমে যাওয়ার পর রাজধানী বুদাপেস্টের সবচেয়ে বড় ইহুদী ক্লাব ‘এমটিকে বুদাপেস্ট’-এ নাম লেখালেন তিনি। দুই বছরের মাথায় নামের পাশে ঝুলালেন প্রথম লীগ শিরোপা। ক্লাবের হয়ে তার নজরকাড়া পারফরম্যান্স বাস্তবেই নজর কেড়েছিল হাঙ্গেরীর জাতীয় দলের কোচের, সুযোগ পেলেন জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামার। ডাক পেলেন ১৯২৪ অলিম্পিক গেমসেও, কিন্তু সমস্যা বাঁধাল তার নীতিবোধ।
অলিম্পিক সফরে খেলোয়াড়দের চেয়ে বোর্ডের কর্মকর্তাদের সংখ্যা বেশি! আর যে হোটেলে উঠলেন তারা, তা যতটা না খেলোয়াড়দের জন্য উপযোগী, তার চেয়ে বেশি উপযোগী পার্টি করার জন্য। ব্যস, এই একটি কারণই যথেষ্ঠ ছিল গুতমানের অভিযোগ জমা দেওয়ার জন্য। ফলাফল বোর্ড কর্মকর্তাদের চক্ষুশূল হয়ে জাতীয় দলকে অকাল বিদায় জানানো।
এদিকে দেশের অবস্থাও ভাল নয়, সিংহাসনে বসেছেন ইহুদীবিদ্বেষী মিকলোস। ফলে হাঙ্গেরী থেকে পাততাড়ি গুটাতে হলো তাকে, নতুন গন্তব্য আরেক ইহুদী ক্লাব ‘হাকোয়াহ ভিয়েন’। হাকোয়াহ ভিয়েনে গিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন গুতমান, খেলার পাশাপাশি দেশ-বিদেশ ঘোরার সুযোগটাও তার মতো যাযাবরের কাছে সামান্য কিছু নয়। হাকোয়াহ ভিয়েনের মতো ক্লাবগুলো প্রায়ই লন্ডন-নিউইয়র্কের মতো শহরে চ্যারিটি ম্যাচের আয়োজন করে, অর্থ যায় ইহুদী জায়োনিস্টদের পকেটে।
১৯২৬ সালের এরকমই এক গ্রীষ্মের সফরে নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমালেন বিলো, তবে সফর শেষে আটলান্টিকের ওপারেই থেকে যাওয়া মনস্থির করলেন। দুই বছর নিউ ইয়র্ক জায়ান্টসে কাটানোর পর গায়ে চাপালেন নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বড় ইহুদী ক্লাব ‘হাকোয়াহ নিউ ইয়র্ক’-এর জার্সি। ভিয়েনাতে খেলা তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে আমেরিকার মাটিতে জিতলেন ইউএস ওপেন কাপ।
কিছুদিন পর ‘ব্রুকলিন হাকোয়াহ’-এর সাথে এক হয়ে ক্লাবের নাম হয়ে গেল ‘হাকোয়াহ অল স্টার্স’। কিন্তু আমেরিকার মাটিতে গুতমানের সুখ বলে অবশিষ্ট তেমন কিছু ছিল না। ১৯২৯ এ ওয়াল স্ট্রিটের ধ্বস তার বিনিয়োগ করা টাকাকে বেমালুম হাওয়া করে সর্বস্বান্ত করে দেয়, তার উপর মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আমেরিকার লীগও অভ্যন্তরীণ কারণে বন্ধ হয়ে যায়। শেষমেশ ভাগ্যের ফেরে আবারও ফিরে যান তিনি অস্ট্রিয়ায়, সেখানেই ইতি টানেন ১৪ বছরের খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের।
অবসর নেওয়ার পর ফুটবল থেকে বেশিদিন আলাদা থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। পরের মৌসুমের শুরুতেই প্রাক্তন ক্লাব ‘হাকোয়াহ ভিয়েন’-এর কোচ হিসেবে যোগ দিলেন গুতমান। তার মতো যাযাবরের পক্ষে এক ক্লাবে দুই মৌসুমের বেশি থেকে যাওয়া কষ্টই বটে এবং হয়েছিলও তাই।
তিনি চষে বেড়িয়েছেন মাতৃভূমি হাঙ্গেরীর এ মাথা থেকে ও’ মাথা। মাঝখান থেকে রোমানিয়ায় একটু উঁকি দিলেন, ইতালির পাস্তা খেলেন, আর্জেন্টিনার প্লেট নদীর উপর একটু বিড়ি ফুঁকলেন, গ্রিক দেবী আফ্রোডাইটের সাথে প্রেম করলেন, ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে সাম্বা নাচলেন, আর শেষমেশ থিতু হলেন ভাস্কো ডা গামার দেশ পর্তুগালে।
জন্মভূমি হাঙ্গেরী আর অ্যামাজনের জঙ্গলে ভরা ব্রাজিলে সাফল্য পেলেও পর্তুগালেই পেয়েছেন তিনি কিংবদন্তীর আসন। পর্তুগালে তার প্রথম মৌসুমটা কেটেছিল পোর্তোর হয়ে, অবিশ্বাস্য ৫ গোলের ব্যবধানে লীগ শিরোপা থেকে বঞ্চিত করেছিলেন সমান পয়েন্ট পাওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী বেনফিকা দলকে। ঠিক পরের মৌসুমেই ছড়ি উল্টোদিকে ঘুরালেন গুতমান, যোগ দিলেন বেনফিকায়।
যুগান্তকারী ৪-২-৪ ফরমেশনের উদ্ভাবক নিজের সেরাটা দেখানো শুরু করলেন ‘দ্য ঈগলস’দের হয়ে। প্রথমেই ঝেটিয়ে বিদায় করলেন মূল দলের বিশ জন খেলোয়াড়কে! আবার শোনা যাক, ২০ জন খেলোয়াড়! তাদের জায়গা প্রতিস্থাপন করলেন যুব দলের খেলোয়াড়দের দিয়ে। তেজী, তারুণ্যে ভরপুর খেলোয়াড়দেরকে অগ্রাধিকার দিতেন বিলো গুতমান। তারই ধারাবাহিকতায় লেফট উইং-এ যুক্ত করলেন অ্যান্টোনিয়ো কস্তাকে, রাইট উইং-এ ধরে নিয়ে আসলেন পিন্টো আলমেইদাকে, আর প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ধ্বস নামানোর জন্য বিশাল বপুর অধিকারী সেন্টার ফরোয়ার্ড হোসে অগাস্তো তোরেস তো রয়েছেই। রক্ষণভাগের নেতা জার্মানো আর দুর্গের দারোয়ান আলবার্তো পেরেইরা আক্রমণ সামলানোর জন্য সদা প্রস্তুত। তবে তার পাজল নিখুঁতভাবে মেলানোর জন্য আরও একজনকে দরকার ছিল।
সেই একজনের খবর কানে আসল চুল কাটানোর সময়ে, নাপিতের দোকানে নিয়ে গিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান স্কাউট কার্লোস বুয়োরকে। কার্লোস বুয়োরের কথা শুনে মনে হলো এরকম কোনো ক্ষিপ্র চিতাবাঘই তার দলের হিসাব নিকাশ মেলাতে সাহায্যে করবে। সাথে সাথেই ছুটে গেলেন মোজাম্বিকে, ভারত মহাসাগরের কোল ঘেঁষা বিশাল এক দেশে।
গুতমানের পাকা জহুরীর চোখ ইউসেবিওর মতো কালো রত্ন চিনতে ভুল করেননি, বুঝতে পারলেন এরকমই কাউকে দরকার। খুঁজে বের করলেন ইউসেবিওর পরিবারকে, দাম বললেন বছরে হাজার ইউরো। গুতমানের আগ্রহ ভরা চোখ দেখে ইউসেবিওর বড় ভাই চেয়ে বসলেন দ্বিগুণ, কোনো রকম বাছবিচার ছাড়াই রাজি হয়ে গেলেন এই হাঙ্গেরীয়ান।
পরিবারের সাথে চুক্তি হলেও সমস্যা বাঁধলো অন্য জায়গায়। ইউসেবিও খেলতেন বেনফিকার আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী ‘স্পোর্টিং ক্লাবের’ ফিডার ক্লাবে। প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিয়ে রাতের অন্ধকারে ইউসেবিওকে সাথে নিয়ে পর্তুগালে পাড়ি জমালেন গুতমান। স্পোর্টিং ক্লাবের লোকজন দ্বারা কিডন্যাপের ভয়ে আলগারভে হোটেলে লুকিয়ে রাখলেন ইউসেবিওকে। রুথ মালোসো ছদ্মনামে হোটেলে আটকে থাকা ইউসেবিও ছাড়া পেলেন ১২ দিনের মাথায়, চুক্তির সব ফাঁকফোকর ঠিক করার পর।
দলের এই বিশাল পরিবর্তনে প্রথমদিকে বেনফিকার ভক্তকূল আর কর্মকর্তাদের সমালোচনার তোপের মুখে পড়েছিলেন গুতমান। তবে সমালোচনার দাঁতভাঙ্গা জবাব কিভাবে দিতে ,হয় তা গত ২৫ বছরের কোচিং অভিজ্ঞতার কারণে আগেই জানতেন তিনি।
নিজের ট্যাকটিক্সের উপর তিনি এতটাই আস্থাবান ছিলেন যে, তার মুখ নিঃসৃত বাণীর একটি হলো- “আমি প্রতিপক্ষের করা গোলকে ভয় পাই না, কারণ আমার দলও পরের গোলটা দিতে কার্পণ্যবোধ করবেনা।” আর এই উক্তিকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য দলে ছিলেন ইউসেবিও আর ‘পবিত্র দৈত্য’ মারিও কোলুনা। এই দুইজনের বোঝাপড়ায় তৈরি আক্রমণগুলো ছিল নদীর জোয়ারের মতোই নিরবছিন্ন।
প্রথম মৌসুমে ঘরে নিয়ে আসলেন লীগ শিরোপা, পরের মৌসুমেও তাই। তেজোদ্দীপ্ত তরুণ দল নিয়ে গুড়িয়ে দিলেন হাঙ্গেরীয়ান ত্রয়ী কক্সিস-জিবোর-কুবালার বার্সেলোনাকে, ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে। গুতমান মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন তৃতীয় মৌসুম সবসময়ই দুর্ভাগ্যজনক। তাই সব ক্লাবেই দুই মৌসুম পার করার পরেই কেটে পড়তেন। তবে ব্যতিক্রম ঘটালেন বেনফিকার ক্ষেত্রে, থেকে গেলেন ইতিহাস গড়ার জন্য।
১৯৬১-৬২ মৌসুমের প্রথমদিকেই চার ম্যাচ হারার খেসারত দিতে হল লীগ শিরোপা হারিয়ে, তবে ট্রফি কেবিনেটে যুক্ত করলেন বেনফিকার ১১তম কাপ শিরোপা। ইউরোপিয়ান কাপেও অপ্রতিরোধ্য বেনফিকার সামনে একে একে লুটিয়ে পড়ল অস্ট্রিয়া ভিয়েন, নুরেমবার্গ আর টটেনহ্যাম হটস্পার।
ফাইনালে প্রতিপক্ষ টানা ৫ বারের ইউরোপিয়ান কাপজয়ী লস ব্লাংকোসরা। পুসকাস-গেন্তো-ডি স্টেফানো দিয়ে সাজানো আক্রমণভাগের সামনে প্রথমদিকে বেশ অসহায়ই হয়ে গিয়েছিল লাল জার্সিধারীরা। পুস্কাসের ঝড়ো গতির হ্যাটট্রিকে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল বেনফিকা, তবে দ্বিতীয়ার্ধে নিজের ঝলক দেখালেন ইউসেবিও। ৫০ মিনিটে প্রথমে গোল করিয়ে ম্যাচে সমতা আনলেন, তারপর ৬৪ আর ৬৯ মিনিটে মাদ্রিদের কফিনে শেষ দুইটি পেরেক ঠুকে দিলেন। ম্যাচ শেষে পুসকাস জার্সি বিনিময় করলেন ইউসেবিওর সাথে, যেন নিজের রাজত্বের মুকুটটা উত্তরাধিকারীকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
নিজের চিরায়ত দুই মৌসুম প্রথা ভেঙ্গে বেনফিকায় ছিলেন তিন মৌসুম, নিয়ে এসেছেন আশার চেয়েও বেশি সাফল্য। তাই নিজের বেতনের অঙ্কটা কিছুটা বাড়ানোর দাবী তুলতেই পারেন গুতমান। কিন্তু কিসের কী, উলটো শুনতে হলো “থাকার দরকার নেই, আমরা নতুন কাউকে খুঁজে নেব”। আর সেদিন থেকেই ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে বেনফিকার আকাশ অন্ধকার হয়ে গেল বিলো গুতমানের অভিশাপে।
“আগামী ১০০ বছরেও বেনফিকার ট্রফি কেবিনেটে ইউরোপিয়ান কোনো ট্রফি যুক্ত হবে না”- কথাগুলো রাগের মাথায় বলা হতে পারে, কিন্তু সেটাই জুটে গেল বেনফিকার কপালে। গুতমানের সেই অভিশাপের পর কেটে গেছে ৫৫টি বছর, বেনফিকা এখন পর্তুগালের সবকয়টি শিরোপার সর্বোচ্চ ভাগীদার। কিন্তু ইউরোপে? বেনফিকা হেরেছে ৫টি ইউরোপিয়ান কাপ আর ৩টি উয়েফা কাপের ফাইনাল!
অভিশাপের প্রভাব
বেলা গুটমানের অভিশাপ দেওয়ার পর থেকেই বেনফিকার জন্য ইউরোপীয় শিরোপা যেন এক ধাঁধাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এরপর আটবার ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলেও একবারও শিরোপা জিততে পারেনি। ফাইনালগুলোতে বেনফিকার ভাগ্য ছিল অদ্ভুতভাবে নিষ্ঠুর।
- ১৯৬৩: এফসি মিলানের কাছে পরাজয়।
- ১৯৬৫: ইন্টার মিলানের কাছে হার।
- ১৯৬৮: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে হেরে যায়।
- ১৯৮৩: অ্যান্ডারলেখটের কাছে ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপের ফাইনালে পরাজিত।
- ১৯৮৮: পিএসভি আইন্দহোভেনের বিপক্ষে হেরে যায়।
- ১৯৯০: এসি মিলানের কাছে ফাইনালে পরাজয়।
- ২০১৩: ইউরোপা লিগের ফাইনালে চেলসির কাছে পরাজিত।
- ২০১৪: আবারও ইউরোপা লিগের ফাইনালে সেভিয়ার কাছে হার।
গুটমানের অভিশাপ ভাঙার চেষ্টা
বেনফিকা সমর্থকরা বারবার এই অভিশাপ ভাঙার চেষ্টা করেছেন। ১৯৯০ সালে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল খেলার আগে বেনফিকার কোচ ও সমর্থকরা গুটমানের কবরের সামনে গিয়ে প্রার্থনা করেন। কিন্তু তবুও এসি মিলানের কাছে তারা হেরে যায়।
ক্লাবটি অভিশাপ ভাঙার জন্য বিভিন্ন রকমের রীতিও পালন করেছে। তবুও তারা আজ পর্যন্ত কোনো ইউরোপীয় শিরোপা জিততে পারেনি।
কেবল কুসংস্কার নাকি বাস্তবতা?
অনেকে মনে করেন, এটি কেবল একটি কুসংস্কার। ফুটবলে জয়-পরাজয় নির্ভর করে দলের পারফরম্যান্স, কোচিং, কৌশল এবং খেলোয়াড়দের দক্ষতার ওপর। তবে বারবার একই ধরনের ব্যর্থতা এই কুসংস্কারকে আরও জোরালো করেছে।
অন্যদিকে, বেনফিকার সমর্থকরা এখনো আশায় বুক বাঁধেন যে ক্লাবটি ১০০ বছরের অভিশাপ ভেঙে ইউরোপীয় শিরোপা জিতবে। ১৯৬২ সালের পর থেকে বেনফিকা ইউরোপীয় মুকুটের জন্য লড়ছে এবং ভবিষ্যতে হয়তো তারা সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।
শেষ কথা-
বেনফিকার ১০০ বছরের অভিশাপ ইউরোপীয় ফুটবলের সবচেয়ে মজার এবং রহস্যময় গল্পগুলোর একটি। এটি কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা নাকি সত্যিই কোনো অদৃশ্য শক্তির প্রভাব—তা হয়তো কখনোই জানা যাবে না। তবে ফুটবলপ্রেমীরা সবসময়ই এই গল্পটি শুনতে ভালোবাসেন এবং পরবর্তী ফাইনালে বেনফিকার ভাগ্য পরিবর্তনের অপেক্ষায় থাকেন।